ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: আইডিয়াল টাইমস
আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। অত:পর গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়৷ ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির বোন মিম আক্তার দলটির নাম ঘোষণা করেন।
একইসঙ্গে তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে আখতার হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার নিবা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ও সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি মনে করে সব শহীদের স্বপ্ন এবং আহতদের স্পিরিট ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য পারস্পরিক সহাবস্থান জরুরি। এক্ষেত্রে আমাদের পার্টি সামনে থেকে ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্য চিত্র শেষে পর্দায় ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ লেখাটি ভেসে ওঠে।
এরপর এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও সিনিয়র নেতারা মঞ্চে ওঠেন।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘এক ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে ৫ আগস্ট উৎখাত করা হয়েছে। ১৮৫৭, ১৯৪৭, ‘৯০-এ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছে। এই বাংলায় হাজারো চিন্তার, মতের সম্মিলন ঘটেছে। ঐতিহাসিক সমৃদ্ধশালী পূর্ব বাংলা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, বৈদেশিক দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এসবের ধারাবাহিকতায় আজকের ২৪ এসেছে। আগস্টে বৈদেশিক দালালের মহাদানবকে তাড়িয়ে দিয়েছে জনগণ।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের এখন নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। কোনো এলিটগোষ্ঠী, পরিবারতন্ত্রের আনুগত্য করতে জনগণ আর রাজি নয়। আগামীতে আমাদের নেতা হবে দিনমজুর খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিকদের সন্তান। জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নকে লালন করতেই এই নতুন দলের আবির্ভাব হচ্ছে। এই লড়াই চলবে, এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। এজন্য প্রস্তুত জাতীয় নাগরিক পার্টি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘আমাদের দল হবে শুধুই বাংলাদেশপন্থী, যারা শুধু বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে সুস্থ রাজনীতির বাংলাদেশ। সংকটের সময়ে সবার একটাই প্রাধান্য থাকবে বাংলাদেশ। আমরা এজন্য দায়বদ্ধ থাকব।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্রের। আগামীর বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজি থাকবে না। আগামীর বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে সহিংসতায় প্রাণ যাবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের বাংলাদেশ।’
এর আগে স্লোগানে স্লোগানে মিছিল নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন তারা। কেউ এসেছেন রংপুর থেকে, কেউ এসেছেন খুলনা থেকে। পরে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।