Dhaka ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: আইডিয়াল টাইমস বিডিআর হত্যাকান্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলে চালানো হয়েছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ সফলতার জন্য করণীয় কি ? আইডিয়াল টাইমস আদীব হুজুরের কলমে কোরআনের অনুবাদ: আইডিয়াল টাইমস হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার চালুর নির্দেশ দিলেন প্রফেসর ড. ইউনুস ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান-এর বক্তব্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত: প্রেস সচিব জেনারেল ওয়াকারের পদত্যাগ চেয়েছিলাম: তুহিন খান ইসলামপন্থীরাই জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় যোদ্ধা : পিনাকি ভট্রাচার্য্য ৬ মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি: চরমোনাই পীর

ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ইবাদত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৭ Time View

মানুষ ও প্রাণিকুলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো বাক বা ভাষা। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মানুষ সৃষ্টি করলেন। তাকে ভাষা বয়ান শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ আর রাহমান, আয়াত: ১-৪)

শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ছিলেন ‘আফসাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি (সা.)–এর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা কিতাব নাজিল করেছেন ও নবী–রাসুলদের পাঠিয়েছেন তাঁদের স্বজাতির ভাষায়। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ৪)

মহাগ্রন্থ আল–কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)

হজরত মুসা (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলে তিনি বললেন, ‘“আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে বাগ্মী। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সাহায্য করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে।” আল্লাহ বললেন, “আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার হাত শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে তাদের ওপর প্রবল হবে।”’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ৩৪-৩৫)

নবী কারিম (সা.) মদিনা মুনাওয়ারায় বদর যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে যাঁরা লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, তাঁদের মুক্তিপণের বিনিময়ে অর্থসম্পদ না নিয়ে এর পরিবর্তে তাঁদের মুসলিম শিশুদের লেখাপড়া ও ভাষাশিক্ষার শিক্ষকরূপে নিয়োজিত করেছিলেন এবং ১০ সাহাবি সন্তানকে ভাষাশিক্ষাদানের বিনিময়ে তাঁদের একেকজনকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সাহাবিকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর যাঁরা বিভিন্ন ভাষা জানেন, তাঁদের প্রশংসা করেছিলেন।

ভাষা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষার অলংকৃত রূপ হলো সাহিত্য। সাহিত্যের বিশেষায়িত পর্ব হলো কাব্য। যিনি কাব্য করেন, তিনি হলেন ‘কবি’। মুসলমানদের হাতেই রচিত হয় আরবি ভাষার ব্যাকরণ। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শিষ্য হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)–কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ‘ইলমে নাহু’ ও ‘ইলমে ছরফ’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ‘ইলমে বায়ান’, ‘ইলমে মাআনি’ ও ‘ইলমে বাদি’র উন্মেষ ঘটে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হে নবী (সা.)! আমি আপনার প্রতি সর্বসুন্দর কাহিনি বর্ণনা করেছি।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২) প্রিয় নবীজি (সা.) নিজে কাব্য করতেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.) কাব্য রচনা করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) কাব্যচর্চা করতেন। এভাবে ইসলামের সব যুগেই বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যচর্চা চলে আসছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন ‘ইকরা’ মানে পড়ো। (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১) কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে বিচার দিবসে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)

Tag :
About Author Information

Popular Post

ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: আইডিয়াল টাইমস

ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ইবাদত

Update Time : ০৫:৪৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মানুষ ও প্রাণিকুলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো বাক বা ভাষা। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মানুষ সৃষ্টি করলেন। তাকে ভাষা বয়ান শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ আর রাহমান, আয়াত: ১-৪)

শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ছিলেন ‘আফসাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি (সা.)–এর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা কিতাব নাজিল করেছেন ও নবী–রাসুলদের পাঠিয়েছেন তাঁদের স্বজাতির ভাষায়। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ৪)

মহাগ্রন্থ আল–কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)

হজরত মুসা (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলে তিনি বললেন, ‘“আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে বাগ্মী। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সাহায্য করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে।” আল্লাহ বললেন, “আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার হাত শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে তাদের ওপর প্রবল হবে।”’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ৩৪-৩৫)

নবী কারিম (সা.) মদিনা মুনাওয়ারায় বদর যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে যাঁরা লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, তাঁদের মুক্তিপণের বিনিময়ে অর্থসম্পদ না নিয়ে এর পরিবর্তে তাঁদের মুসলিম শিশুদের লেখাপড়া ও ভাষাশিক্ষার শিক্ষকরূপে নিয়োজিত করেছিলেন এবং ১০ সাহাবি সন্তানকে ভাষাশিক্ষাদানের বিনিময়ে তাঁদের একেকজনকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সাহাবিকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর যাঁরা বিভিন্ন ভাষা জানেন, তাঁদের প্রশংসা করেছিলেন।

ভাষা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষার অলংকৃত রূপ হলো সাহিত্য। সাহিত্যের বিশেষায়িত পর্ব হলো কাব্য। যিনি কাব্য করেন, তিনি হলেন ‘কবি’। মুসলমানদের হাতেই রচিত হয় আরবি ভাষার ব্যাকরণ। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শিষ্য হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)–কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ‘ইলমে নাহু’ ও ‘ইলমে ছরফ’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ‘ইলমে বায়ান’, ‘ইলমে মাআনি’ ও ‘ইলমে বাদি’র উন্মেষ ঘটে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হে নবী (সা.)! আমি আপনার প্রতি সর্বসুন্দর কাহিনি বর্ণনা করেছি।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২) প্রিয় নবীজি (সা.) নিজে কাব্য করতেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.) কাব্য রচনা করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) কাব্যচর্চা করতেন। এভাবে ইসলামের সব যুগেই বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যচর্চা চলে আসছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন ‘ইকরা’ মানে পড়ো। (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১) কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে বিচার দিবসে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)