Dhaka ০৩:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: আইডিয়াল টাইমস বিডিআর হত্যাকান্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলে চালানো হয়েছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ সফলতার জন্য করণীয় কি ? আইডিয়াল টাইমস আদীব হুজুরের কলমে কোরআনের অনুবাদ: আইডিয়াল টাইমস হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার চালুর নির্দেশ দিলেন প্রফেসর ড. ইউনুস ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান-এর বক্তব্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত: প্রেস সচিব জেনারেল ওয়াকারের পদত্যাগ চেয়েছিলাম: তুহিন খান ইসলামপন্থীরাই জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় যোদ্ধা : পিনাকি ভট্রাচার্য্য ৬ মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি: চরমোনাই পীর

সিন্ডিকেটে জিম্মি ক্রেতা: তেল আছে তেল নেই!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪২:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৩ Time View

পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে রান্নার অন্যতম উপকরণ সয়াবিন তেল। রোজার মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই অতিপ্রয়োজনীয় এই নিত্যপণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। আর এর পেছনে সিন্ডিকেট জড়িত।

আবার তেল বিক্রি করা কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা আটা-ময়দাসহ অন্য পণ্য না কিনলে সয়াবিন তেল দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ওই কোম্পানির পণ্য কিনতে হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে রোজার মাসে সংকট আরও বাড়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রোজার মাসকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ছোলা, খেজুর, চিনি, মটর ডাল, সয়াবিন তেল ও ফলসহ বিভিন্ন পণ্য গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। আর গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে গত জানুয়ারিতে প্রায় চার গুণ বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুই লাখ ৩২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৬৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে তিন লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে, গত এক বছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে তিন লাখ ১৯ হাজার ২০ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল আমদানি হেয়েছে। গত বছর যা আমদানি হয়েছিল ৮১ হাজার ৮৯৯ টন। অর্থাৎ সেই হিসাবে প্রায় চার গুণ বেশি।

প্রশ্ন উঠেছে, এত আদানির পরও সয়াবিন তেল গেল কোথায়? কেন দোকান ঘুরে সহজেই মিলছে না রান্নার এই জরুরি উপকরণ? ভোজ্যতেল মজুদ করে রাখা হয়েছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর জন্য এই অপকর্ম করছে সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগই করছেন জেরবার হওয়া সাধারণ ক্রেতারা।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার গৃহবধূ নাসিমা সুলতানা বলছেন, মুদি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। আবার পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।

একই রকম অভিযোগ রাজধানীর মগবাজার এলাকার একটি ভবনের তত্তাবধায়ক রফিকুল ইসলামের। তিনি বলছেন, একেক সময় একেক পণ্য মজুদ করে বাজার সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে রাখে। এবার রোজার আগেই তারা সয়াবিন তেল দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করেছে।

ভোজ্য তেল নিয়ে এমন ভোগান্তির মধ্যে নড়ে বসেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান ভোজ্য তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে বাধ্য করলেই কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে রবিবার অধিদপ্তরের এক বৈঠকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ভোক্তা অধিকার মহাপরিচালক এও বলেছেন, টেকসই সমাধানের জন্য মিল মালিকদের ভোজ্যতেলের উৎপাদন এবং সরবরাহের তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে মিল মালিকদের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের তেল সরবরাহ করতে হবে।

ভোক্তা অধিকারের এই বৈঠকে ছিলেন ভোজ্যতেলের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল আতাহার তাসলিম। তিনি দাবি করেছেন, তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য জুড়ে দেওয়া হচ্ছে না। এই জন্য তিনি দায়ী করছেন ডিলারদের।

ভোজ্য তেলের সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি আর জাহাজ ফিরতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যে বাজারে চাহিদার অতিরিক্ত সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে।’

Tag :
About Author Information

Popular Post

ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: আইডিয়াল টাইমস

সিন্ডিকেটে জিম্মি ক্রেতা: তেল আছে তেল নেই!

Update Time : ০৫:৪২:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে রান্নার অন্যতম উপকরণ সয়াবিন তেল। রোজার মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই অতিপ্রয়োজনীয় এই নিত্যপণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। আর এর পেছনে সিন্ডিকেট জড়িত।

আবার তেল বিক্রি করা কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা আটা-ময়দাসহ অন্য পণ্য না কিনলে সয়াবিন তেল দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ওই কোম্পানির পণ্য কিনতে হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে রোজার মাসে সংকট আরও বাড়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রোজার মাসকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ছোলা, খেজুর, চিনি, মটর ডাল, সয়াবিন তেল ও ফলসহ বিভিন্ন পণ্য গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। আর গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে গত জানুয়ারিতে প্রায় চার গুণ বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুই লাখ ৩২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৬৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে তিন লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে, গত এক বছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে তিন লাখ ১৯ হাজার ২০ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল আমদানি হেয়েছে। গত বছর যা আমদানি হয়েছিল ৮১ হাজার ৮৯৯ টন। অর্থাৎ সেই হিসাবে প্রায় চার গুণ বেশি।

প্রশ্ন উঠেছে, এত আদানির পরও সয়াবিন তেল গেল কোথায়? কেন দোকান ঘুরে সহজেই মিলছে না রান্নার এই জরুরি উপকরণ? ভোজ্যতেল মজুদ করে রাখা হয়েছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর জন্য এই অপকর্ম করছে সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগই করছেন জেরবার হওয়া সাধারণ ক্রেতারা।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার গৃহবধূ নাসিমা সুলতানা বলছেন, মুদি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। আবার পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।

একই রকম অভিযোগ রাজধানীর মগবাজার এলাকার একটি ভবনের তত্তাবধায়ক রফিকুল ইসলামের। তিনি বলছেন, একেক সময় একেক পণ্য মজুদ করে বাজার সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে রাখে। এবার রোজার আগেই তারা সয়াবিন তেল দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করেছে।

ভোজ্য তেল নিয়ে এমন ভোগান্তির মধ্যে নড়ে বসেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান ভোজ্য তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে বাধ্য করলেই কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে রবিবার অধিদপ্তরের এক বৈঠকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ভোক্তা অধিকার মহাপরিচালক এও বলেছেন, টেকসই সমাধানের জন্য মিল মালিকদের ভোজ্যতেলের উৎপাদন এবং সরবরাহের তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে মিল মালিকদের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের তেল সরবরাহ করতে হবে।

ভোক্তা অধিকারের এই বৈঠকে ছিলেন ভোজ্যতেলের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল আতাহার তাসলিম। তিনি দাবি করেছেন, তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য জুড়ে দেওয়া হচ্ছে না। এই জন্য তিনি দায়ী করছেন ডিলারদের।

ভোজ্য তেলের সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি আর জাহাজ ফিরতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যে বাজারে চাহিদার অতিরিক্ত সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে।’