Dhaka ০৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গিয়েছে না গেছে? আবদুল হক

সাহিত্যকথন-আবদুল হক

সূর্য ডুবে গিয়েছে। নদী শুকিয়ে গিয়েছে। পাখি উড়ে গিয়েছে। ‘গিয়েছে’ না লিখে ‘গেছে’ও লেখা হয়। সূর্য ডুবে গেছে। নদী শুকিয়ে গেছে। পাখি উড়ে গেছে। সাধু ‘গিয়াছে’-এর চলিত রূপ কোনটি, ‘গিয়েছে’ না ‘গেছে’? নাকি দুটোই চলিত ও প্রমিত? কোনটা লিখব? ভালো কোনটা?

‘গিয়াছে’ > ‘গিয়েছে’ > ‘গেছে’। প্রথমটা সাধু, দ্বিতীয়টা প্রমিত চলিত, তৃতীয়টা মূলত কথ্য চলিত। প্রমিত মানে মানসম্মত, আদর্শ, স্ট্যান্ডার্ড। চলিতভাষার মৌলিক ও গম্ভীর ধরনের রচনায় ‘গিয়েছে’ লিখুন; হালকা, চটুল বা কথ্য ধাঁচের লেখা হলে ‘গেছে’। আবার একই লেখায় কখনো কখনো ‘গিয়েছে’ ও ‘গেছে’ দুটোই দেখা যায়, বড় লেখকদের লেখায়ও; এক্ষেত্রে ব্যাকরণ নয়, লেখকের সূক্ষ্ম রুচিই বিচারক; বাক্যের ভঙ্গির সঙ্গে যখন যেটা বেশি খাপ খায়, তখন সেটাই তুলে নেন লেখক।

কিন্তু ‘গিয়েছে’-কে প্রমিত বলার কারণ কী? কারণ ঐক্যবিধান। নিয়াছে > নিয়েছে > (নেছে)? দিয়াছে > দিয়েছে > (দেছে)? পাইয়াছে > পেয়েছে > (পেছে)? না, ‘নেছে-দেছে-পেছে’ হয় না; ‘নিয়েছে-দিয়েছে-পেয়েছে’-তে থেমে যেতে হয়। এগুলোর সঙ্গে মিল রেখে তাই ‘নিয়াছে’ থেকে আসা ‘নিয়েছে’ই প্রমিত। পুনশ্চ, ঢালাওভাবে কেউ ‘গেছে’ লিখলেও ভুল বলা বা মানা করা যাবে না, তবে সূক্ষ্ম রুচিমান পাঠকের কাছে কোথাও কোথাও খটকা লাগতে পারে।

দরকারি কথা শেষ। অদরকারি একটা মজার কথা দিয়ে লেখা শেষ করি। সাধু ‘গিয়াছে’ চলিতে এসে ‘গিয়েছে’ হয়েছে ধ্বনিপরিবর্তনের একটা নিয়ম মেনে। সেই নিয়মের নাম স্বরসঙ্গতি। দুটো শব্দের পরিবর্তন খেয়াল করুন─
জিলাপি > জিলেপি > জিলিপি।
বিলাতি > বিলেতি > বিলিতি।


প্রথম নিয়ম: আগের ই-কারের প্রভাবে পরের অ-কার বা আ-কারটি এ-কার হয়ে যায়। অর্থাৎ ই+আ=এ। একে বলে প্রগত স্বরসঙ্গতি। এই নিয়মে হয়েছে জিলাপি > জিলেপি, বিলাতি > বিলেতি।


দ্বিতীয় নিয়ম: পরের ই-কারের প্রভাবে আগের এ-কারটি ই-কার হয়ে যায়। অর্থাৎ এ<ই=ই। একে বলে পরাগত স্বরসঙ্গতি। এই নিয়মে হয়েছে জিলেপি > জিলিপি, বিলেতি > বিলিতি।
এভাবেই, প্রগত স্বরসঙ্গতি অনুসারে, ‘গিয়াছে’ শব্দের ই+আ=এ/য়ে হয়ে শব্দটি হয়েছে ‘গিয়েছে’।

──────────────
⚪আবদুল হক#ভাষা, #ব্যাকরণ, #শুদ্ধিপত্র ॥ ১১-০৫-‘২৫।

See less
About Author Information

গিয়েছে না গেছে? আবদুল হক

Update Time : ০৫:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

সাহিত্যকথন-আবদুল হক

সূর্য ডুবে গিয়েছে। নদী শুকিয়ে গিয়েছে। পাখি উড়ে গিয়েছে। ‘গিয়েছে’ না লিখে ‘গেছে’ও লেখা হয়। সূর্য ডুবে গেছে। নদী শুকিয়ে গেছে। পাখি উড়ে গেছে। সাধু ‘গিয়াছে’-এর চলিত রূপ কোনটি, ‘গিয়েছে’ না ‘গেছে’? নাকি দুটোই চলিত ও প্রমিত? কোনটা লিখব? ভালো কোনটা?

‘গিয়াছে’ > ‘গিয়েছে’ > ‘গেছে’। প্রথমটা সাধু, দ্বিতীয়টা প্রমিত চলিত, তৃতীয়টা মূলত কথ্য চলিত। প্রমিত মানে মানসম্মত, আদর্শ, স্ট্যান্ডার্ড। চলিতভাষার মৌলিক ও গম্ভীর ধরনের রচনায় ‘গিয়েছে’ লিখুন; হালকা, চটুল বা কথ্য ধাঁচের লেখা হলে ‘গেছে’। আবার একই লেখায় কখনো কখনো ‘গিয়েছে’ ও ‘গেছে’ দুটোই দেখা যায়, বড় লেখকদের লেখায়ও; এক্ষেত্রে ব্যাকরণ নয়, লেখকের সূক্ষ্ম রুচিই বিচারক; বাক্যের ভঙ্গির সঙ্গে যখন যেটা বেশি খাপ খায়, তখন সেটাই তুলে নেন লেখক।

কিন্তু ‘গিয়েছে’-কে প্রমিত বলার কারণ কী? কারণ ঐক্যবিধান। নিয়াছে > নিয়েছে > (নেছে)? দিয়াছে > দিয়েছে > (দেছে)? পাইয়াছে > পেয়েছে > (পেছে)? না, ‘নেছে-দেছে-পেছে’ হয় না; ‘নিয়েছে-দিয়েছে-পেয়েছে’-তে থেমে যেতে হয়। এগুলোর সঙ্গে মিল রেখে তাই ‘নিয়াছে’ থেকে আসা ‘নিয়েছে’ই প্রমিত। পুনশ্চ, ঢালাওভাবে কেউ ‘গেছে’ লিখলেও ভুল বলা বা মানা করা যাবে না, তবে সূক্ষ্ম রুচিমান পাঠকের কাছে কোথাও কোথাও খটকা লাগতে পারে।

দরকারি কথা শেষ। অদরকারি একটা মজার কথা দিয়ে লেখা শেষ করি। সাধু ‘গিয়াছে’ চলিতে এসে ‘গিয়েছে’ হয়েছে ধ্বনিপরিবর্তনের একটা নিয়ম মেনে। সেই নিয়মের নাম স্বরসঙ্গতি। দুটো শব্দের পরিবর্তন খেয়াল করুন─
জিলাপি > জিলেপি > জিলিপি।
বিলাতি > বিলেতি > বিলিতি।


প্রথম নিয়ম: আগের ই-কারের প্রভাবে পরের অ-কার বা আ-কারটি এ-কার হয়ে যায়। অর্থাৎ ই+আ=এ। একে বলে প্রগত স্বরসঙ্গতি। এই নিয়মে হয়েছে জিলাপি > জিলেপি, বিলাতি > বিলেতি।


দ্বিতীয় নিয়ম: পরের ই-কারের প্রভাবে আগের এ-কারটি ই-কার হয়ে যায়। অর্থাৎ এ<ই=ই। একে বলে পরাগত স্বরসঙ্গতি। এই নিয়মে হয়েছে জিলেপি > জিলিপি, বিলেতি > বিলিতি।
এভাবেই, প্রগত স্বরসঙ্গতি অনুসারে, ‘গিয়াছে’ শব্দের ই+আ=এ/য়ে হয়ে শব্দটি হয়েছে ‘গিয়েছে’।

──────────────
⚪আবদুল হক#ভাষা, #ব্যাকরণ, #শুদ্ধিপত্র ॥ ১১-০৫-‘২৫।

See less