“জাপানিজ অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে”-জাপানের সম্মেলনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
জাপানে ইসলামিক মিশন জাপান-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ মাওলানা সাবের আহমেদের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল মারুফের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “জাপানিজ অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে, মৌখিক দাওয়াতের পাশাপাশি ব্যক্তিগত চরিত্র আচরন, ন্যায় নীতি ও আখলাক দিয়ে তাদের কাছে ইসলামের অনুপম সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে হবে”।
জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাওয়াহ ও সমাজকল্যাণ মূলক শীর্ষ সংগঠন ইসলামিক মিশন জাপানের (IMJ) তিন দিনব্যাপী বার্ষিক কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন ও শিক্ষা শিবির ২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্য রফিকুল ইসলাম খান এ কথা গুলো বলেন।
জাপানের কানাগাওয়া প্রিফেকচারের আতসুগি সিটির নানাছাওয়া ন্যাচার সেন্টারে গোল্ডেন উইকে তিনদিন ব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে মুমিন জীবনের বাস্তবতা ও দায়িত্ব সহ বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য প্রদান করেন মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন ইউরোপের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা নুরুল মাতিন চৌধুরী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মিশনের সভাপতি বলেন, “জাপানের মাটিতে প্রবাসী মুসলিমদের ঈমান-আমল ঠিক রাখার পাশাপাশি অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই ইসলামিক মিশন জাপান প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে জাপানিজ ভাষায় ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন জাপানিজ দাঈ সালমান সুগিমতো সেনসেই।
“দেশে দেশে ইসলামী আন্দোলন” শীর্ষক প্যানেল আলোচনা, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পরামর্শ সভাসহ কেন্দ্রীয় কমিটি ও শাখা সভাপতি নির্বাচন, নতুন সদস্য ও কর্মীদের শপথ গ্রহণ, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, প্যনেল ডিসকাশন এবং সদস্য বৈঠক ও ৩য় দিবসে কানাগাওয়া মিয়াগাছে লেক সাইড পার্কে ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের গায়েবানা জানাজায় ইমামতি ও জানাজাপূর্ব আলোচনা পেশ করেন মুহতারাম প্রধান অতিথি ॥
জাপানিজ বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মিঃ তোশিকাজু কোমিয়ামা, পরিচালক, জাপান-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন, অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন প্রতিমন্ত্রী তাইশিরো ইয়ামাগিওয়া এর সংসদীয় সচিব মিঃ টেপেই ইয়োশিনো ও মিঃ তাকেতসুকা কিমুরা প্রাক্তন এমপি এলডিপি।
এবং রুইয়াতে হিলাল কমিটির চেয়ারম্যান ড. সলিমুর রহমান খান
সম্মেলন পরবর্তীতে টোকিওস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস, এর মান্যবর রাস্ট্রদূত জনাব মুহাম্মদ দাউদ আলীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
জাপানের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য, স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন ঘুরে দেখার পাশাপাশি জনাব খান বিভিন্ন মসজিদ ও বাংলাদেশী কমিউনিটির সমাবেশে মতবিনিময় ও বক্তব্য রাখেন।
মিশনের বার্ষিক কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন ও শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল ভেদাভেদের অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের জন্য ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাই যথেষ্ট হবে না, এ জন্য অবশ্যই সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আর এটিই দ্বীনি বাধ্যবাধকতা এবং বাস্তব পরিস্থিতির দাবি। ইসলাম সংগঠিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার চেতনাকে উৎসাহিত করে এবং বিচ্ছিন্ন থাকার বিরোধী।
আর যে বিচ্ছিন্ন থাকে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। দলছুট ও বিচ্ছিন্ন মেষই নেকড়ের খপ্পড়ে পড়ে। তাই জামায়াত বাদ দিয়ে যদি কেউ একাকী অথবা জামায়াতের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নামাজ আদায় করে তাহলে তার নামাজ পূর্ণাঙ্গ হয় না। একজন ঈমানদার আরেকজন ঈমানদারের কাছে পরস্পর সংযুক্ত ইটের শক্ত গাঁথুনির মতো। সৎ ও নেক কাজে সহযোগিতা করা অন্যতম দ্বীনি ফারজ কাজ এবং পরস্পরকে সত্য ও সহিষ্ণুতার নসিহত করা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম পূর্বশর্ত।
তিনি বলেন সুযোগবাদী স্বার্থান্বেষী ও মুনাফিকরাই ইসলামী আন্দোলনে এসে নিস্ক্রিয় থাকে। সুযোগ বুঝে এ আন্দোলন থেকে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে এবং অনেক সময়ে এ আন্দোলনের ক্ষতি করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। বিশ্বনবী (সা)-এর সময়ে আব্দুল্লাহ বিন উবাইসহ কিছু সুযোগবাদী, স্বার্থান্বেষী মুনাফিক ছিল, লোক দেখানো এবং স্বার্থ হাসিল করার জন্যই তারা মূলত এ আন্দোলনে শরিক হয়েছিল।
এইসব মুনাফিকদের সম্পর্কে সূরা নিসার ১৪২-১৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোকাবাজি করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাদেরকে ধোকার প্রতিফলন প্রদান করবেন। তারা যখন নামাজের জন্য দাঁড়ায় তখন অনিচ্ছা ও শৈথিল্য সহকারে শুধু লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে। তারা কুফরি ও ঈমানের মাঝখানে দোদুল্যমান হয়ে রয়েছে, না পূর্ণভাবে এদিকে না পূর্ণভাবে ওদিকে। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার মুক্তির জন্য আপনি কোনো পথ পাবেন না।”
সম্মেলনে দিশারী শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।