Dhaka ১১:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এখন সময়ের দাবি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:২১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • ১১ Time View

ইব্রাহীম খলিল, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সময়ের দাবি: কওমি শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার
– ইব্রাহীম খলিল, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

কওমি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলার যোগ্য মানুষ আমি নই। এই অঙ্গনে এমন অনেক গুণী আলিম রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের প্রজ্ঞা ও সাধনার মাধ্যমে কেবল কওমি সমাজ নয়, বরং পুরো জাতিকে আলোকিত করে চলেছেন। তারপরও বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দু-একটি কথা বলেছি, আজও বলছি।

আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ‘প্রফেশনাল এমএ’ নামে একটি কোর্স পরিচালনা করি। এটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত একটি দুই বছর মেয়াদি কোর্স, যা চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রতি বছর দুইবার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, এবং যেকোনো বিষয়ে স্নাতক/সমমানের ডিগ্রিধারীরা এতে ভর্তি হতে পারেন। ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাচ ভর্তি হয়েছে, এখন চলছে ১২তম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম, যা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে।

ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমি, কোর্স পরিচালনা কমিটির কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে, বহু কওমি ফারেগ ভাইদের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি—একটাই প্রশ্ন: দাওরায়ে হাদিস সম্পন্নকারীরা এই কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন কি না?

আমাকে প্রতিদিনই দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে ‘না’ বলতে হয়।
কারণগুলো সুনির্দিষ্ট:

দাওরাহ সম্পন্নকারীদের মাধ্যমিক/সমমান সার্টিফিকেট নেই।

উচ্চ মাধ্যমিক/সমমানের সার্টিফিকেট নেই।

স্নাতক/সমমানের স্বীকৃত সার্টিফিকেটও নেই।

তাদের এমএ সমমানের ঘোষণা থাকলেও সেটি কীভাবে একাডেমিকভাবে সংযুক্ত হবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আর সত্যিই যদি দাওরাহ এমএ সমমান হয়, তবে আবার একটি এমএ করার প্রয়োজন কেন?

বাস্তবতা হলো—ঘোষণার বাইরে দাওরাহ সনদের কোনো রূপরেখা বা একাডেমিক ভিত্তি নেই। এ কারণেই আমার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য একজন বরেণ্য আলিম, যিনি গণমাধ্যমে খুবই পরিচিত মুখ, আমার অধীনে এম.ফিল করার আবেদন পর্যন্ত করতে পারেননি।

শোনা যায়, কিছু মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে দাওরাহ সনদ দিয়ে এম.ফিল/পিএইচডি করা যায়। কিন্তু সংখ্যাটি হাতে গোনা। অথচ আমাদের কওমি আলিমদের অনেকেই ইলমে ও আমলে উচ্চতর মানের ধারক-বাহক। তাঁরা যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণায় যুক্ত হতে পারতেন, উম্মাহর বিরাট কল্যাণ হতো।

প্রশ্ন হলো: এই সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছেন না কেন?

একটু কাঠামোগত পরিবর্তন কি খুব কঠিন?
কওমি শিক্ষাব্যবস্থার নিজস্ব বোর্ড, অভিন্ন সিলেবাস ও কারিকুলাম রয়েছে। যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তারাও ডোনেশন ভিত্তিতে চলে। যদি এই কাঠামোর সাথেই মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত স্বীকৃতি যুক্ত করা যেত, তবে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেত।

কেউ কেউ বলেন, স্বীকৃতি দিলে কওমি আলিমরা আর ইলমচর্চায় একনিষ্ঠ থাকবেন না। তারা আলিয়া ধারার মতো দুনিয়ামুখী হয়ে পড়বেন। কিন্তু এটা কি সবক্ষেত্রে সত্য? পৃথিবীর বহু ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বীকৃত কাঠামোতেই কাজ করছে এবং সেখানে ইলমচর্চা আরও দৃঢ় হয়েছে।

আসলে দুনিয়ার প্রয়োজন মেটানোর উপযোগিতা না থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হয় না। কওমি অঙ্গনের অনেক প্রতিষ্ঠানেই আগের মতো খালিস ইলমচর্চা দেখা যায় না—একটি বড় কারণ সম্ভবত পার্থিব চাহিদা মেটাতে এই শিক্ষার সীমাবদ্ধতা।

আমরা কওমি শিক্ষাকে আখিরাতমুখী রাখতে চাই, দুনিয়ামুখী নয়—ঠিক আছে। কিন্তু এই আখিরাতমুখী শিক্ষা কি দুনিয়ার বাস্তব সমস্যার সমাধান দেবে না? রাসূলুল্লাহ (সা.), খুলাফায়ে রাশিদিন, এমনকি উমাইয়া ও আব্বাসি যুগের শিক্ষাব্যবস্থাও তো আখিরাতকেন্দ্রিক হয়েও দুনিয়ার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আমার প্রশ্নগুলো যদি মূর্খতাসুলভ হয়, তবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কিন্তু উম্মাহর একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশ—আলিম সমাজ—যারা অনেক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জ্ঞান রাখেন, অথচ সিস্টেমগত কারণে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা রাখতে পারছেন না, এটা আমার জন্য বেদনাদায়ক।

রাজনীতির প্রসঙ্গে যাব না, আগ্রহও নেই। কিন্তু এটা সত্য যে বিগত এবং বর্তমান সরকার উভয় সময়েই কওমি অঙ্গনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল এবং আছে। তাহলে এত সংস্কার হচ্ছে, এই জরুরি সংস্কারটি কেন হচ্ছে না?

আমি দীর্ঘদিন ধরে কওমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলছি। অধিকাংশ কওমি প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামের সঙ্গে ‘জামিআ’ ব্যবহার করে—যা আরবি বিশ্ববিদ্যালয় শব্দের প্রতিশব্দ। কিন্তু বাস্তবে এটি কেবল নামমাত্র। অথচ কওমি কারিকুলামে প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তাহলে এটিকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় নিয়ে এসে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না কেন?

আমি বিশ্বাস করি, কওমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি থিওলজি, লিটারেচার, সোশিওলজি, বিজনেস, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু হয়, তাহলে আমরা আল-কুরআন, হাদিস ও ফিকহে পারদর্শী, একনিষ্ঠ মুসলিম পেশাজীবী পাবো—যাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলোর দিশারি হতে পারেন।

আমার পর্যবেক্ষণ বলছে—বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় কওমি ছাত্রদের গড় অধ্যয়নকাল বেশি। অথচ এত অধ্যয়ন, এত মেহনত, যদি নিজের, পরিবারের বা জাতির কাজে না লাগে—তাহলে এর তাৎপর্য কোথায়?

সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ!
আল্লাহর ওয়াস্তে একটু ভাবুন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাধারণ প্রফেশনাল এমএ করতে গিয়ে যেন কওমি আলিমদের দৃষ্টি প্রার্থনায় আকুল না হতে হয়।

এ সংস্কারের জন্য কোনো আন্দোলন লাগবে না। প্রয়োজন কেবল উচ্চপর্যায়ের অভিভাবকদের আন্তরিকতা, সম্মিলিত চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা। কওমি অঙ্গনেই বহু শিক্ষাবিদ রয়েছেন, যারা কালোত্তীর্ণ কারিকুলাম তৈরি করতে সক্ষম। প্রক্রিয়াটি শুরু হলেই, ইনশাআল্লাহ, প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি অর্জন কঠিন হবে না।

আমি একজন নিরপেক্ষ, নির্মোহ পর্যবেক্ষক হিসেবে কওমি সন্তানদের যথেষ্ট সক্ষম বলে মনে করি। এখন শুধু সাহসিক সিদ্ধান্ত এবং আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

মূল লেখক: ইব্রাহীম খলিল, সহকারী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

About Author Information

কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এখন সময়ের দাবি

Update Time : ০৯:২১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

সময়ের দাবি: কওমি শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার
– ইব্রাহীম খলিল, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

কওমি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলার যোগ্য মানুষ আমি নই। এই অঙ্গনে এমন অনেক গুণী আলিম রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের প্রজ্ঞা ও সাধনার মাধ্যমে কেবল কওমি সমাজ নয়, বরং পুরো জাতিকে আলোকিত করে চলেছেন। তারপরও বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দু-একটি কথা বলেছি, আজও বলছি।

আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ‘প্রফেশনাল এমএ’ নামে একটি কোর্স পরিচালনা করি। এটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত একটি দুই বছর মেয়াদি কোর্স, যা চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রতি বছর দুইবার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, এবং যেকোনো বিষয়ে স্নাতক/সমমানের ডিগ্রিধারীরা এতে ভর্তি হতে পারেন। ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাচ ভর্তি হয়েছে, এখন চলছে ১২তম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম, যা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে।

ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমি, কোর্স পরিচালনা কমিটির কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে, বহু কওমি ফারেগ ভাইদের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি—একটাই প্রশ্ন: দাওরায়ে হাদিস সম্পন্নকারীরা এই কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন কি না?

আমাকে প্রতিদিনই দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে ‘না’ বলতে হয়।
কারণগুলো সুনির্দিষ্ট:

দাওরাহ সম্পন্নকারীদের মাধ্যমিক/সমমান সার্টিফিকেট নেই।

উচ্চ মাধ্যমিক/সমমানের সার্টিফিকেট নেই।

স্নাতক/সমমানের স্বীকৃত সার্টিফিকেটও নেই।

তাদের এমএ সমমানের ঘোষণা থাকলেও সেটি কীভাবে একাডেমিকভাবে সংযুক্ত হবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আর সত্যিই যদি দাওরাহ এমএ সমমান হয়, তবে আবার একটি এমএ করার প্রয়োজন কেন?

বাস্তবতা হলো—ঘোষণার বাইরে দাওরাহ সনদের কোনো রূপরেখা বা একাডেমিক ভিত্তি নেই। এ কারণেই আমার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য একজন বরেণ্য আলিম, যিনি গণমাধ্যমে খুবই পরিচিত মুখ, আমার অধীনে এম.ফিল করার আবেদন পর্যন্ত করতে পারেননি।

শোনা যায়, কিছু মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে দাওরাহ সনদ দিয়ে এম.ফিল/পিএইচডি করা যায়। কিন্তু সংখ্যাটি হাতে গোনা। অথচ আমাদের কওমি আলিমদের অনেকেই ইলমে ও আমলে উচ্চতর মানের ধারক-বাহক। তাঁরা যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণায় যুক্ত হতে পারতেন, উম্মাহর বিরাট কল্যাণ হতো।

প্রশ্ন হলো: এই সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছেন না কেন?

একটু কাঠামোগত পরিবর্তন কি খুব কঠিন?
কওমি শিক্ষাব্যবস্থার নিজস্ব বোর্ড, অভিন্ন সিলেবাস ও কারিকুলাম রয়েছে। যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তারাও ডোনেশন ভিত্তিতে চলে। যদি এই কাঠামোর সাথেই মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত স্বীকৃতি যুক্ত করা যেত, তবে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেত।

কেউ কেউ বলেন, স্বীকৃতি দিলে কওমি আলিমরা আর ইলমচর্চায় একনিষ্ঠ থাকবেন না। তারা আলিয়া ধারার মতো দুনিয়ামুখী হয়ে পড়বেন। কিন্তু এটা কি সবক্ষেত্রে সত্য? পৃথিবীর বহু ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বীকৃত কাঠামোতেই কাজ করছে এবং সেখানে ইলমচর্চা আরও দৃঢ় হয়েছে।

আসলে দুনিয়ার প্রয়োজন মেটানোর উপযোগিতা না থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হয় না। কওমি অঙ্গনের অনেক প্রতিষ্ঠানেই আগের মতো খালিস ইলমচর্চা দেখা যায় না—একটি বড় কারণ সম্ভবত পার্থিব চাহিদা মেটাতে এই শিক্ষার সীমাবদ্ধতা।

আমরা কওমি শিক্ষাকে আখিরাতমুখী রাখতে চাই, দুনিয়ামুখী নয়—ঠিক আছে। কিন্তু এই আখিরাতমুখী শিক্ষা কি দুনিয়ার বাস্তব সমস্যার সমাধান দেবে না? রাসূলুল্লাহ (সা.), খুলাফায়ে রাশিদিন, এমনকি উমাইয়া ও আব্বাসি যুগের শিক্ষাব্যবস্থাও তো আখিরাতকেন্দ্রিক হয়েও দুনিয়ার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আমার প্রশ্নগুলো যদি মূর্খতাসুলভ হয়, তবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কিন্তু উম্মাহর একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশ—আলিম সমাজ—যারা অনেক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জ্ঞান রাখেন, অথচ সিস্টেমগত কারণে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা রাখতে পারছেন না, এটা আমার জন্য বেদনাদায়ক।

রাজনীতির প্রসঙ্গে যাব না, আগ্রহও নেই। কিন্তু এটা সত্য যে বিগত এবং বর্তমান সরকার উভয় সময়েই কওমি অঙ্গনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল এবং আছে। তাহলে এত সংস্কার হচ্ছে, এই জরুরি সংস্কারটি কেন হচ্ছে না?

আমি দীর্ঘদিন ধরে কওমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলছি। অধিকাংশ কওমি প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামের সঙ্গে ‘জামিআ’ ব্যবহার করে—যা আরবি বিশ্ববিদ্যালয় শব্দের প্রতিশব্দ। কিন্তু বাস্তবে এটি কেবল নামমাত্র। অথচ কওমি কারিকুলামে প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তাহলে এটিকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় নিয়ে এসে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না কেন?

আমি বিশ্বাস করি, কওমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি থিওলজি, লিটারেচার, সোশিওলজি, বিজনেস, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু হয়, তাহলে আমরা আল-কুরআন, হাদিস ও ফিকহে পারদর্শী, একনিষ্ঠ মুসলিম পেশাজীবী পাবো—যাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলোর দিশারি হতে পারেন।

আমার পর্যবেক্ষণ বলছে—বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় কওমি ছাত্রদের গড় অধ্যয়নকাল বেশি। অথচ এত অধ্যয়ন, এত মেহনত, যদি নিজের, পরিবারের বা জাতির কাজে না লাগে—তাহলে এর তাৎপর্য কোথায়?

সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ!
আল্লাহর ওয়াস্তে একটু ভাবুন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাধারণ প্রফেশনাল এমএ করতে গিয়ে যেন কওমি আলিমদের দৃষ্টি প্রার্থনায় আকুল না হতে হয়।

এ সংস্কারের জন্য কোনো আন্দোলন লাগবে না। প্রয়োজন কেবল উচ্চপর্যায়ের অভিভাবকদের আন্তরিকতা, সম্মিলিত চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা। কওমি অঙ্গনেই বহু শিক্ষাবিদ রয়েছেন, যারা কালোত্তীর্ণ কারিকুলাম তৈরি করতে সক্ষম। প্রক্রিয়াটি শুরু হলেই, ইনশাআল্লাহ, প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি অর্জন কঠিন হবে না।

আমি একজন নিরপেক্ষ, নির্মোহ পর্যবেক্ষক হিসেবে কওমি সন্তানদের যথেষ্ট সক্ষম বলে মনে করি। এখন শুধু সাহসিক সিদ্ধান্ত এবং আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

মূল লেখক: ইব্রাহীম খলিল, সহকারী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়