Dhaka ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিশুর বিকাশে পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব: কলাম: আবুবকর বিন রাশেদ

শিশুর কল্যাণকর জীবন গঠনে আমাদের করণীয়

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৫৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
  • ১২ Time View

শিশুর বিকাশে পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব
একটি ছোট চারাগাছ, যখন মাটিতে রোপণ করা হয়, তখনই তার যত্নের প্রয়োজন শুরু হয়—জল দিতে হয়, আগাছা সরাতে হয়, প্রয়োজন হলে বাঁশের খুঁটি দিয়ে তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে হয়। একটু অবহেলা হলেই সে বাঁকা হয়ে যায়, ঝড়ে ভেঙে পড়ে, কিংবা শুকিয়ে যায় চিরতরে। আমাদের শিশুরাও ঠিক তেমনই—ভবিষ্যতের বৃক্ষরূপে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের প্রয়োজন স্নেহ, শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং সুরক্ষা।

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপদ, নৈতিক ও সম্ভাবনাময় জীবন গঠনের দায়িত্ব আমাদের সবার। শুধু খাদ্য বা বস্ত্র দিয়ে নয়, বরং তাদের মনোজগৎ, নৈতিকতা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটিয়েই গড়ে তুলতে হবে তাদেরকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে। এ কাজটি এককভাবে সম্ভব নয়, এতে জড়িত রয়েছে পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবার সম্মিলিত ভূমিকা।

১. পরিবারের দায়িত্ব
পরিবার শিশুর প্রথম পাঠশালা। শিশুর জীবনের প্রাথমিক মূল্যবোধ, ভাষা, আচার-আচরণ পরিবার থেকেই শেখে। তাই পরিবারকে হতে হবে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল।
পরিবারের করণীয়:
ভালোবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করা
শিশুর সামনে নৈতিক আচরণ প্রদর্শন
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু করা
শিশুদের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে উত্তর দেওয়া
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো ও সীমা নির্ধারণ করা

২. শিক্ষকের দায়িত্ব
শিক্ষক হচ্ছেন শিশুর ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তাঁরা শুধু পাঠদান করেন না, বরং একটি শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন।
শিক্ষকের করণীয়:
শিক্ষাকে আনন্দময় ও উৎসাহব্যঞ্জক করে তোলা
শিশুর ভেতরের প্রতিভা ও সম্ভাবনা চিনে তার বিকাশে সহায়তা করা
শারীরিক শাস্তির বদলে ভালোবাসাময় শৃঙ্খলা
নৈতিকতা ও মানবিকতার শিক্ষা দেওয়া
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মসম্মান রক্ষা করা

৩. সমাজের দায়িত্ব
শিশু একা বড় হয় না, সমাজের পরিবেশও তাকে গড়ে তোলে। শিশুদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং মনোভাব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমাজের করণীয়:
শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলা
শিশুশ্রম ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সোচ্চার হওয়া
খেলার মাঠ, পাঠাগার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা
শিশুদের সঙ্গে অভদ্র বা অবমাননাকর আচরণ না করা
সমাজে শিশু বান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলা

৪. রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব
রাষ্ট্রের নীতিমালা ও কাঠামোই নির্ধারণ করে শিশুদের কতটা সুযোগ-সুবিধা তারা পাবে। একটি সুশীল ও মানবিক সমাজ গঠনে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়।
রাষ্ট্রের করণীয়:
মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির ব্যবস্থা করা
শিশুশ্রম, নিপীড়ন ও পাচার প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ
প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিশুদের জন্য শিক্ষা ও সচেতনতা পৌঁছানো

শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা
গণমাধ্যমে শিশুদের ইতিবাচক উপস্থাপনা নিশ্চিত করা

সারকথা
আমাদের সন্তানরা যেন কেবল জীবিত না থাকে, বরং তারা যেন সম্মানজনক, আত্মমর্যাদাশীল ও সুশিক্ষিত জীবন লাভ করতে পারে—এটাই আমাদের কাম্য। এজন্য প্রত্যেক অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্রকে হতে হবে দায়িত্বশীল, আন্তরিক ও শিশুবান্ধব।
আসুন, চারাগাছের মতো আমাদের শিশুকেও যত্নে, শিক্ষায়, মূল্যবোধে ও ভালোবাসায় সিক্ত করি, যাতে তারা একদিন ছায়াদানকারী মহীরুহে পরিণত হয়। তাহলেই গড়ে উঠবে একটি নৈতিক, সুশিক্ষিত ও মানবিক বাংলাদেশ।
মহান আল্লাহ আমাদের এই মহৎ দায়িত্ব পালনে সহায় হোন। আমিন।

About Author Information

শিশুর বিকাশে পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব: কলাম: আবুবকর বিন রাশেদ

শিশুর কল্যাণকর জীবন গঠনে আমাদের করণীয়

Update Time : ০৬:৫৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

শিশুর বিকাশে পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব
একটি ছোট চারাগাছ, যখন মাটিতে রোপণ করা হয়, তখনই তার যত্নের প্রয়োজন শুরু হয়—জল দিতে হয়, আগাছা সরাতে হয়, প্রয়োজন হলে বাঁশের খুঁটি দিয়ে তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে হয়। একটু অবহেলা হলেই সে বাঁকা হয়ে যায়, ঝড়ে ভেঙে পড়ে, কিংবা শুকিয়ে যায় চিরতরে। আমাদের শিশুরাও ঠিক তেমনই—ভবিষ্যতের বৃক্ষরূপে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের প্রয়োজন স্নেহ, শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং সুরক্ষা।

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপদ, নৈতিক ও সম্ভাবনাময় জীবন গঠনের দায়িত্ব আমাদের সবার। শুধু খাদ্য বা বস্ত্র দিয়ে নয়, বরং তাদের মনোজগৎ, নৈতিকতা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটিয়েই গড়ে তুলতে হবে তাদেরকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে। এ কাজটি এককভাবে সম্ভব নয়, এতে জড়িত রয়েছে পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবার সম্মিলিত ভূমিকা।

১. পরিবারের দায়িত্ব
পরিবার শিশুর প্রথম পাঠশালা। শিশুর জীবনের প্রাথমিক মূল্যবোধ, ভাষা, আচার-আচরণ পরিবার থেকেই শেখে। তাই পরিবারকে হতে হবে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল।
পরিবারের করণীয়:
ভালোবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করা
শিশুর সামনে নৈতিক আচরণ প্রদর্শন
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু করা
শিশুদের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে উত্তর দেওয়া
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো ও সীমা নির্ধারণ করা

২. শিক্ষকের দায়িত্ব
শিক্ষক হচ্ছেন শিশুর ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তাঁরা শুধু পাঠদান করেন না, বরং একটি শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন।
শিক্ষকের করণীয়:
শিক্ষাকে আনন্দময় ও উৎসাহব্যঞ্জক করে তোলা
শিশুর ভেতরের প্রতিভা ও সম্ভাবনা চিনে তার বিকাশে সহায়তা করা
শারীরিক শাস্তির বদলে ভালোবাসাময় শৃঙ্খলা
নৈতিকতা ও মানবিকতার শিক্ষা দেওয়া
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মসম্মান রক্ষা করা

৩. সমাজের দায়িত্ব
শিশু একা বড় হয় না, সমাজের পরিবেশও তাকে গড়ে তোলে। শিশুদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং মনোভাব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমাজের করণীয়:
শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলা
শিশুশ্রম ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সোচ্চার হওয়া
খেলার মাঠ, পাঠাগার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা
শিশুদের সঙ্গে অভদ্র বা অবমাননাকর আচরণ না করা
সমাজে শিশু বান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলা

৪. রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব
রাষ্ট্রের নীতিমালা ও কাঠামোই নির্ধারণ করে শিশুদের কতটা সুযোগ-সুবিধা তারা পাবে। একটি সুশীল ও মানবিক সমাজ গঠনে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়।
রাষ্ট্রের করণীয়:
মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির ব্যবস্থা করা
শিশুশ্রম, নিপীড়ন ও পাচার প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ
প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিশুদের জন্য শিক্ষা ও সচেতনতা পৌঁছানো

শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা
গণমাধ্যমে শিশুদের ইতিবাচক উপস্থাপনা নিশ্চিত করা

সারকথা
আমাদের সন্তানরা যেন কেবল জীবিত না থাকে, বরং তারা যেন সম্মানজনক, আত্মমর্যাদাশীল ও সুশিক্ষিত জীবন লাভ করতে পারে—এটাই আমাদের কাম্য। এজন্য প্রত্যেক অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্রকে হতে হবে দায়িত্বশীল, আন্তরিক ও শিশুবান্ধব।
আসুন, চারাগাছের মতো আমাদের শিশুকেও যত্নে, শিক্ষায়, মূল্যবোধে ও ভালোবাসায় সিক্ত করি, যাতে তারা একদিন ছায়াদানকারী মহীরুহে পরিণত হয়। তাহলেই গড়ে উঠবে একটি নৈতিক, সুশিক্ষিত ও মানবিক বাংলাদেশ।
মহান আল্লাহ আমাদের এই মহৎ দায়িত্ব পালনে সহায় হোন। আমিন।