মানুষ হওয়াই প্রকৃত শিক্ষা
আবুবকর বিন রাশেদ
নায়েবে মুহতামিম, মাদরাসাতুল মারওয়াহ
ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ হওয়াই বড় কথা
আজকাল অনেক অভিভাবক সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে যতটা চিন্তিত থাকেন, নৈতিক শিক্ষার দিকে ততটা মনোযোগ দেন না। অথচ একজন মানুষকে সত্যিকারের “সফল” করে তোলে তার চরিত্র, আচরণ, সহানুভূতি আর দায়িত্ববোধ। শুধু ভালো রেজাল্ট বা ডিগ্রি থাকলেই একজন মানুষ পরিপূর্ণ হয় না—তাকে হতে হয় ভালো মানুষ।
আমরা যদি ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে সত্য বলা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা এবং মানুষকে সম্মান করতে শেখাই, তাহলে সে ভবিষ্যতে শুধু নিজের নয়, সমাজেরও উপকারে আসবে।
এখানে একটি ছোট্ট ঘটনার কথা বলি— নাবিল, চতুর্থ শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্র। প্রতিবার ক্লাসে প্রথম হয়। একদিন স্কুলে রায়হান নামে এক সহপাঠীকে দেখা গেল ছেঁড়া জামা আর পুরনো চটি পরে এসেছে। কয়েকজন ছেলে হাসাহাসি করছিল। সবাই নিরুত্তর, কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু নাবিল সাহস করে এগিয়ে এসে বলল, “কারো পোশাক দেখে তাকে ছোট করে দেখা ঠিক না। কারো অবস্থা নিয়ে হাসলে আমরা নিজেরাই ছোট হয়ে যাই।”
এই কথাগুলো হয়তো বইয়ে শেখানো হয়নি, কিন্তু নাবিলের মনুষ্যত্ব তাকে শিখিয়েছে। সেই মুহূর্তে সে শুধু একজন ভালো ছাত্র নয়, একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করল। এটাই শিক্ষা—সততা, সহানুভূতি আর ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর শিক্ষা।
বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি শেখে দেখে—আর তা আসে বাবা-মায়ের আচরণ থেকে। আমরা যদি সত্যবাদী না হই, মানুষের প্রতি সম্মান না দেখাই, তাহলে আমাদের সন্তানও সেসব গুণ অর্জন করতে পারবে না। তাই সন্তানকে আদর্শ মানুষ বানাতে চাইলে আগে নিজেদেরও হতে হবে সেই আদর্শ।
আমাদের সমাজে অনেক উদাহরণ আছে যেখানে উচ্চশিক্ষিত মানুষটি তাঁর আত্মকেন্দ্রিকতা, অহং বা অনৈতিকতার কারণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার এমন মানুষও আছেন যাঁরা হয়তো উচ্চশিক্ষিত নন, কিন্তু সততা ও মানবিকতায় সমাজের চোখে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠেছেন।
সারকথা: সফলতা মানে কেবল সার্টিফিকেট বা পেশাগত সাফল্য নয়। সফলতা মানে এমন একজন মানুষ হওয়া, যিনি তার চারপাশে ভালো প্রভাব ফেলতে পারেন। সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে—তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এই দায়িত্ব শুধু শিক্ষকের নয়, সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বাবা-মায়ের।