কোরবানি: ত্যাগ ও তাকওয়ার বাস্তব অনুশীলন
লিখেছেন: শায়খ আহমাদুল্লাহ
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদুল আজহার মূল কেন্দ্রবিন্দু। এটি শুধু পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিস ত্যাগ করার একটি মহান অনুশীলন। ইসলামী ইতিহাসে কোরবানির সূচনা আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাঁদের মধ্যে একজনের কোরবানি কবুল হয়, অপরজনেরটি হয় না। এখান থেকেই বোঝা যায়, কোরবানির গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে নিয়ত ও তাকওয়ার ওপর।
কোরবানি কার ওপর ওয়াজিব?
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, মুসলিম ব্যক্তি, যিনি ১০ জিলহজ ফজরের সময় থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন, তাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের অন্তর্ভুক্ত সম্পদের মধ্যে রয়েছে: নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্য, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি-জমি ও আসবাবপত্র।
শরিক হওয়ার নিয়ম
বড় পশু (গরু, উট) জবাইয়ে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারেন। তবে একটি ভাগে একাধিক ব্যক্তি অংশ নিতে পারবে না। যেমন, দুই ভাই মিলে এক ভাগ কিনে কোরবানি করলে তা সহিহ হবে না। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, একজন অপরজনকে তার অংশ হিবাহ করে দিলে এবং সে এককভাবে কোরবানি করলে তা বৈধ হবে। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের উট ও গরুতে সাতজন করে শরিক হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন (সহিহ মুসলিম: ১৩১৮)।
একান্নবর্তী পরিবারের ক্ষেত্রে
এক পরিবারের একাধিক সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হলে, প্রত্যেককে আলাদাভাবে একটি করে কোরবানি দিতে হবে, অথবা বড় পশুতে নির্দিষ্ট অংশ নিতে হবে। একটি কোরবানি পরিবারের সকলের পক্ষে যথেষ্ট হবে না, যদি সবার ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে।
উপসংহার
কোরবানি শুধুমাত্র একটি সামাজিক-ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি তাকওয়া, ত্যাগ ও আনুগত্যের বাস্তব শিক্ষা দেয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মত্যাগের এই অনুশীলন যেন আমাদের জীবনেও ঈমানি চেতনার আলো ছড়ায়—এই হোক কোরবানির আসল উদ্দেশ্য।